শনিবার, মার্চ ২৫, ২০২৩

Close

Home মতামত উপ- সম্পাদকীয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও ন্যাটো; সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু স্মৃতি

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও ন্যাটো; সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু স্মৃতি

১৯৭৪ হতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত আমি সোভিয়েত ইউনিয়নে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বাকুতে পড়াশুনা করেছি। মাঝে এক বছর দেশে ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকুরী করেছিলাম। সে সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোকে ওরা পৃথিবীর রাজধানী বলে আখ্যায়িত করতো। অপূর্ব সুন্দর শহর। এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, উন্নত এবং ঐতিহ্য পূর্ণ শহর যা পৃথিবীর সেরা শহরগুলির মধ্যে অন্যতম। সর্ব সোভিয়েত বাংলাদেশ ছাত্র এ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র হতে বাংলাদেশ ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হিসেবে যোগদানের উদ্দেশ্যে আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের ২য় বৃহত্তম শহর রুশ প্রজাতন্ত্রের লেলিনগ্রাদ (বর্তমানে সেন্ট পিটারর্সবুর্গ) শহর দেখার। সে সময়ে মস্কো, লেলিনগ্রাদ, কিয়েভ, বাকু, তিবিলিসি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সেরা শহরগুলি মধ্যে অন্যতম এবং আমার সব শহরই দেখার সৌভাগ্য হয়েছিলো। অপূর্ব, ঐতিহ্যপূর্ণ প্রতিটি শহর। আমার সৌভাগ্য হয়েছিলো দু’বার মস্কো অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করার আজারবাইজান প্রজাতন্ত্র থেকে বিদেশী ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে হতে সেরা প্রতিযোগী হিসেবে। প্রথম বার Moscow Olympiad of Young Scientists এবং দ্বিতীয় বার Moscow Russian Language Olympiad। দু’বারই চূড়ান্ত বিজয়ী ১০ জনের মধ্যে আমি ছিলাম এবং একমাত্র বাংলাদেশী। সোভিয়েত ইউনিয়নের শিক্ষামন্ত্রী ড. ভি.পি এলুটিন আমার হাতে ডিপ্লোমা সনদ এবং পুরষ্কার তুলে দিয়ে বলেছিলেন: ‘‘তোমার এ মেধা তোমার দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাবে’’। হয়তো সে কারণেই পাশ্চাত্যে আমার অনেক সুন্দর সুন্দর অফার থাকা সত্ত্বেও আমি সে সব দেশে বসবাসের জন্য যাইনি। পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়-ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কেলেতে উচ্চশিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পেয়েও যাইনি কারণ দেখেছি সে দেশে কেউ গেলে আর দেশে ফিরতে চায় না। ক্যাডেট কলেজে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নে লেখাপড়া আমাকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেছে। যদিও এর কোন মূল্য এ দেশে নেই।

যাহোক মস্কো অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করে দু’বার বিজয়ী হওয়ার পর আমাকে পাঁচ তারকা হোটেলে দু’সপ্তাহ রাখা হয়েছিলো এবং সরকারীভাবে পুরা শহর দেখানো থেকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যপূর্ণ বলশোই থিয়েটার এবং ব্যালে, মস্কো সার্কাস ইত্যাদি উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়া হয়।

এ মুহূর্তে আমার খুবই খারাপ লাগছে রাশিয়ার জন্য যেমন তেমনি ইউক্রেনের জন্য। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়ন সে সময়ে পাশে না থাকলে আজ পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অস্তিত্ব হয়তো থাকতো না। শুধুমাত্র ইন্ডিয়ার দ্বারা এত বড় অর্জন সম্ভব ছিল না। যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো প্রদান না করতো; যদি আমেরিকার ৭ম নৌবহরের বিপরীতে তাদের নৌবহর না প্রেরণ করতো। সে সময়ে প্রায় সারা পৃথিবী-আমেরিকা, পাশ্চাত্যের দেশসমূহ; গোটা আরব বিশ্ব; চীন-সবাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ছিল।

মহান সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইন্ডিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতার কারণেই বাংলাদেশ এত দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাধীন হয়েছিলো। যাহোক সে সব পুরাতন ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে এখন লাভ নেই।

সোভিয়েত ইউনিয়ন সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের স্কলারশিপ দিয়ে যে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেয় তা নজিরবিহীন। শুধুমাত্র বাকুতে আমি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি সেখানে পৃথিবীর ৬৫টি দেশের ছাত্র-ছাত্রী স্কলারশিপ পেয়ে বিনা পয়সায় পড়াশুনার সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী সে দেশে স্কলারশিপ পেয়ে পড়াশুনা করেছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন প্রকারের নিষেধাজ্ঞাসমূহ থাকা সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতি বছর হাজার হাজার বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা, গবেষণা ও ভরন পোষণের দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়েছে। আমি দেখেছি বিশ্বে একমাত্র জাপান এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে অনেকটাই নিঃস্বার্থভাবে। হ্যাঁ, এ কথা সত্য যে, প্রতিটি মানুষ, প্রত্যেক দেশই নিজ স্বার্থের কথা চিন্তা করে এবং সেটিই স্বাভাবিক। দেখতে হবে সেটি কতখানি। বিপদেই সত্যিকারের বন্ধুর পরিচয়।

এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ন্যাটো প্রসঙ্গে আসা যাক। যুদ্ধ কখনও কাম্য হতে পারে না। রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন অগ্রহণযোগ্য। অবশ্য রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভার মতে রুশ অভিযানকে আগ্রাসন বলার অধিকার ন্যাটোর নেই। বিশ্বখ্যাত আমেরিকান দার্শনিক নোম চোমস্কি বলেন, রাশিয়াকে এই যুদ্ধে প্ররোচিত করা হয়েছে। তার মতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর ১৯৯০ সালে গর্বাচেভ একীভূত জার্মানিকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তি সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবং সিদ্ধান্ত ছিল, NATO will not extend further one inch to the east.”

আমেরিকার ৩ বারের সিনেটর- অলিম্পিক স্বর্ণ পদক প্রাপ্ত বিল ব্র্যাডলি, যিনি ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে ২০০০ সালে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থী ছিলেন। তিনি ২৩ জানুয়ারি, ২০০৮ সালে বলেন, “Expansion of NATO is a fundamental blunder.”

জানুয়ারি ২৬, ১৯৯৭: আমেরিকার ৫০ জন পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞগণ একটি খোলা চিঠি প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে পাঠান; সেখানে বলা হয়: ““America’s effort to expand NATO a policy error.” জর্জ কেনান আমেরিকান কূটনীতিক এবং ইতিহাসবিদ যাকে স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ নীতির জনক বলা হয়। তিনি ন্যাটোর বিস্তার নীতি সম্পর্কে বলেছিলেন, ““I think it is a tragic mistake, There was no reason for this whatsoever. No one was threaten.” সট্রক ট্যালবট, আমেরিকার পূর্বের ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট এর মতে: “Many Russians see NATO as a vestice of the cold war. They point out that they have disbanded the Warsaw pact and ask why the West should not do the same.” দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালে আমেরিকা ও ইউরোপের ১২ টি দেশ নিয়ে সামরিক জোট ওয়ারশ-এর সৃষ্টি।

১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হেলসিংকী শীর্ষ সম্মেলনে বুশ গর্বাচেভকে একটি প্রস্তাব দেন, যদি জার্মানি ন্যাটোতে যোগদান করে তবে ন্যাটো পূর্বদিকে এক ইঞ্চিও সম্প্রসারিত হবে না। কোন নতুন মেম্বারও হবে না। কিন্তু এখন আমেরিকা সেটি স্বীকার করছে না। যদিও মার্কিন আর্কাইভে রাখা বহু মেমো, মিটিং মিনিট এই কথারই সত্যতা স্বীকার করে।

১৯৯১ সালে গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন শেষ মূহুর্তে ওয়ারশ ফ্যাক্ট ভেঙ্গে দেয় এবং আশা করেন ন্যাটোকেও ভেঙ্গে দেয়া হবে।

আমার এখানে প্রশ্ন: গর্বাচেভ সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভেঙ্গে দিলেন, জার্মানিকে ন্যাটো-তে যোগ দেয়ার জন্য বুশের প্রস্তাব গ্রহণ করলেন যে, এরপর ন্যাটো এক ইঞ্চিও পূর্বদিকে সম্প্রসারিত হবে না এবং নতুন কোন মেম্বারও হবেনা; কিন্তু কোন প্রকার লিখিত লিগ্যাল ডকুমেন্ট ছাড়াই; উপরন্তু তিনি ওয়ারশ ফ্যাক্টকে ভেঙ্গে দিয়ে গেলেন তাঁর শাসনামলের শেষ মুহূর্তে। তাঁকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হলো। কিন্তু এসবের পিছনে রহস্য কি! আশা করি বিশ্বের কাছে এটি এখন পরিষ্কার।

বর্তমানে আমেরিকা এবং ইউরোপের ৩০টি দেশ ন্যাটো-র সদস্য। এ ছাড়াও বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, জর্জিয়া এবং ইউক্রেন; এমন কি সুইডেন ও ফিনল্যান্ড ও ন্যাটো-র সদস্য পদ লাভের জন্য চেষ্টা করছে।
ইস্টার্ন ইউরোপের অনেক দেশই এখন ন্যাটোর সদস্য যারা কি না একসময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে ছিল। ২০০৭ সালে মিউনিখ বাৎসরিক কনফারেন্সে পুতিন বলেছিলেন “NATO has put its frontline forces on our borders. This expansion 3 represents a serious provocation that reduces the level of mutual trust. And we have the right to ask against whom this expansion intended? And what happened to the assurances our western partners made after the dissolution of the Warsaw Pact? পুতিন সরকার বারবার ন্যাটো থেকে আইনগত নিশ্চয়তা চাচ্ছিল যে ন্যাটো তাঁর ওয়াদা বহাল রাখবে-এক ইঞ্চিও পূর্বে সম্প্রসারিত হবে না। কিন্তু ন্যাটো যখন তা দিতে ব্যর্থ হয় এবং ইউক্রেনের জেলেনস্কি সরকারের কর্মকাণ্ডে ক্ষিপ্ত হয়ে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করে। এখন বিচার বিশ্লেষণ করুন এ যুদ্ধের জন্য সত্যিকার অর্থে কে দায়ী।

পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা দেখেও আমি বিস্মিত হই। আমেরিকার ইরাক আক্রমণের সময় পশ্চিমা সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিলো সাদ্দামের হাতে প্রচুর গণ বিধ্বংসী অস্ত্র আছে বলে সে দেশে আক্রমণ চালিয়ে দেশটিকে ধ্বংস করা হয়েছিলো! পরে সে অস্ত্রের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু বিশ্বকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি! বুশ যখন ইরাক আক্রমণ করে সে সময় The Economist Magazine এর কভার পৃষ্ঠায় বুশের খুব সুন্দর ছবি দিয়ে হেডিং দেয়া হয়; Now the waging of peace। আর এখন পুতিন যখন ইউক্রেন আক্রমণ করে তখন একই ম্যাগাজিনে পুতিনের কালো ছবি দিয়ে মাথার ভিতর একটি ট্যাংক দিয়ে হেডিং দেয়া হয়: Where will he stop? এই হলো পশ্চিমা গণমাধ্যম!

ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়ায় আমেরিকা যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে; তখন কোথায় ছিল জাতিসংঘ? কোথায় ছিল মানবাধিকার কমিশন? কোথায় ছিল আন্তর্জাতিক আদালত এবং বিভিন্ন সংস্থা যারা এখন রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। ইসরাইল দ্বারা কিভাবে ফিলিস্তিনিরা নির্যাতিত হচ্ছে। কেউ দেখার নেই। জেলেনস্কির মতে, ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের যুদ্ধে ইসরায়েল ভুক্তভোগী। ২০১৯ সালে ইসরাইল ফিলিস্তিনের এক বাচ্চাকে যখন মারল তখন জেলেনস্কি বলেছিলেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার্থে তা করতেই পারে।

পশ্চিমাদের অত্যন্ত প্রিয় ইহুদি বংশোদ্ভূত জেলেনস্কি সাধারণ জনগণের হাতে, জেল কয়েদীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন পরাশক্তি রাশান সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। বাস্তবতার নিরিখে বিচার করলে এটি কতটুকু সঠিক পদক্ষেপ তা বিবেচ্য। ট্রাম্প এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর জ্যৈষ্ঠ উপদেষ্টা কর্নেল ডগলাস ম্যাকগ্রে বলেন, ইউক্রেনের সৈনিকরা সে দেশের সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পশ্চিমা বিশ্বের কাছে আবেদন জানিয়েছিল ইউক্রেনের আকাশকে No-Fly zone ঘোষণা দেয়ার। তিনি কি এর ভয়াবহতা জেনে এ আবেদন করেছিলেন, নাকি না জেনে কারোও প্ররোচনায়? ভালো যে বুদ্ধিমান জো-বাইডেন সে প্রস্তাবে সাড়া দেন নি। আবারও তিনি যুদ্ধ বিমান চেয়েছেন যাতে পোল্যান্ড রাজী হয়ে তার মিগ-২৯ ন্যাটো কে দিতে চেয়েছে এবং ন্যাটোর দায়িত্বে তা ইউক্রেনে পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব করে। কী উদ্ভট চিন্তা! ভাগ্যে ন্যাটো সেটি প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ক্ষেত্রেও জো-বাইডেনকে প্রশংসা করা যায়। কারণ তিনি সরাসরি রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়াতে চাচ্ছেন না। কারণ তা হত ৩য় বিশ্বযুদ্ধ।

তবে এ কথা ঠিক যে, পশ্চিমা দেশসমূহ ইউক্রেনে ব্যাপকভাবে সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে। ইউক্রেনে অন্তত: ১০ হাজার পশ্চিমা সামরিক বিশেষজ্ঞদের অবস্থান এবং যার মধ্যে ৪ হাজার আমেরিকার। ইউক্রেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ওলহা ষ্টেফানিশিনার মতে ইউক্রেনে রক্ত ঝরানোর দায় ন্যাটোর। এখন জেলেনস্কি বলছেন, ‘‘ইউক্রেনের প্রতিটি সৈনিক এবং আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে ন্যাটো’’। ইউক্রেন তো ন্যাটোর সদস্য না কিন্তু কেন এমন বক্তব্য?

এখন ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত দেশগুলি যুদ্ধে সরাসরি না জড়ালেও বিভিন্নভাবে ইউক্রেনকে সাহায্য করছে -এমনকি সর্বাধুনিক অস্ত্র দিয়েও। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইতিহাসের সব চেয়ে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু জানা উচিৎ রাশিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ। ও দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল বিশ্ববাজারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সুতরাং এসব নিষেধাজ্ঞায় শুধু রাশিয়াই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, হবে পুরা বিশ্ব। আমার মনে পড়ে, ‘৭০-এর দশকে আমেরিকা এবং পাশ্চাত্য দেশসমূহ সোভিয়েত ইউনিয়নের উপর অনেকটা এমনই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো। সে সময়ে চীনের সাথেও সোভিয়েত ইউনিয়নের সুসম্পর্ক ছিল না। তখন সোভিয়েত নেতা ব্রেজনেভ বলেছিলেন, ‘‘সোভিয়েত ইউনিয়নকে কেউ কাবু করতে পারবে না। আমার দেশের জনগণ এই নিষেধাজ্ঞার ফলে এক ছটাকও খাবার কম খাবে না’’ এবং সেটাই ঘটেছিলো। একটি জিনিসেরও দাম বাড়েনি। ১৯৭৪ হতে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেখেছি এক কেজি চাল বিক্রি হয়েছে ৮৮ কোপেইক, গরুর মাংস কেজি ২ রুবল এবং তেমনি অন্যান্য পণ্যের দাম কখনও বাড়েনি। সেই সিস্টেম অবশ্য এখন আর নেই। এর প্রভাব অবশ্যই রাশিয়ায় পড়বে। যদিও রুশ সরকারের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ‘‘রাশিয়া এসব নিষেধাজ্ঞার পরোয়া করে না। শুধু ইউরোপও আমেরিকা নিয়ে দুনিয়া নয়। এর বাইরে বিশাল একটা দুনিয়া আছে। রাশিয়া এবার নিজের উপর আর্থিক সন্ত্রাসের জবাব দেবে’’।

এই যুদ্ধ হতে পারে পশ্চিমা বিশ্বের একক আধিপত্য বিশেষ করে সামরিক এবং অর্থনৈতিক আধিপত্যকে শেষ করে দেয়ার যুদ্ধ। এই যুদ্ধের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক ভাবে ভীষণ চাপে থাকলেও এখন পর্যন্ত সঠিক পন্থাই অবলম্বন করেছে বলে আমি মনে করি। আশা করি এই অস্থির বিশ্বে দ্রুতই শান্তি ফিরে আসবে। ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ আবার তাদের ঘরে ফিরে আসবে। বিশ্ব নেতাদের শুভবুদ্ধি উদয় হবে। আমরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছি অন্য প্ল্যানেটে জীবনের অস্তিত্ব খোঁজার জন্য অথচ নিজেদের প্ল্যানেটের জীবন ধ্বংস করছি ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। এই কি সভ্যতার বিকাশ?!

 

কলাম লেখক: 
অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম
প্রাক্তন ডিন, ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনলোজী অনুষদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

আপনার মন্তব্য দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

- Advertisment -
  • সর্বশেষ
  • আলোচিত

সাম্প্রতিক মন্তব্য

স্বঘোষিত মহাপুরুষ on লকডাউন বাড়লো আরও একসপ্তাহ
জান্নাতুল ফেরদৌস on চিরবিদায় কিংবদন্তি কবরীর