শিরোনাম দেখে আঁতকে উঠলেন? ওঠাটাই স্বাভাবিক। হেড থেকে গোল করা ফুটবলের শৈল্পিক কারুকাজের একটি। বিশ্বের গ্রেট গ্রেট খেলোয়াড়রা হেড থেকে দুর্দান্ত সব গোল করেছেন। যা আজও মানুষের মনে দাগ কাটে। অথচ কয়েক বছর পর ফুটবলে আর হেড থেকে গোল নাও করা যেতে পারে। এমনই খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল।
গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. উইলি তার এক গবেষণায় জানিয়েছে ডিফেন্ডাররা জীবনের শেষ দিকে স্মৃতিভ্রম রোগসহ মাথার জটিল রোগে ভোগেন। কিন্তু কোন দলের গোলরক্ষকের ক্ষেত্রে এমন কোন সমস্যা হয় না। কারণ ডিফেন্ডাররাই সবচেয়ে বেশি হেড করে থাকেন। তাই তিনি ফুটবল থেকে হেড উঠিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে করেন উইলি। তাই এই হেডকে কিভাবে ফুটবল থেকে বিলুপ্ত করা যায় তারই চিন্তা চালাচ্ছেন তারা। আর এজন্য হেড ছাড়া একটি ফুটবল ম্যাচের আয়োজনও করতে যাচ্ছেন ইংলিশ গবেষকরা। যার আয়োজক হচ্ছে হেড ফর চেঞ্জ নামক একটি জনকল্যাণমূলক সংস্থা। ইতোমধ্যে ইংলিশ গবেষকদের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কিংবদন্তি গ্যারি লিঙ্কার, অ্যালান শেরারের মতো ফুটবলাররা।
চলতি মাসের ২৬ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডের স্পিন ম্যুরে সাবেক পেশাদার ফুটবলারদের নিয়ে আয়োজন করা হবে হেডবিহীন এ ম্যাচটি। ম্যাচটিতে ১৯৭০, ১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকের কিংবদন্তি খেলোয়াড়দের আমন্ত্রণ জানানো হবে। এর মধ্যে যারা খেলতে সক্ষম তাদের খেলার সুযোগ দেয়া হবে। ম্যাচটির প্রথমার্ধে শুধুমাত্র ডি বক্সের ভেতর হেড করার সুযোগ পাবেন খেলোয়াড়রা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে কেউই কোন হেড করতে পারবেন না। হেড করলেই রেফারি সেই খেলোয়াড়কে সতর্ক করবেন।
আর এ ম্যাচটিই হবে ইতিহাসের প্রথম হেড ছাড়া কোনও ফুটবল ম্যাচ। যে ম্যাচটি প্রত্যক্ষ করতে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. উইলি স্টেওয়ার্ট ও তার দল মাঠে থাকবেন।
তবে এমন দাবি এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ২০১৮ সালে বিবিসি রেডিও ফাইভের সঙ্গে আলাপাচারিতায় নাইজেরিয়ার বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ড. বেনেট ওমালু এমন দাবি তোলেন।
হেড বাতিলের আবেদন করে ওমালু বলেন, প্রচণ্ড গতিতে ছুটে আসা কোনো কিছু মাথা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারটি অর্থহীন। অন্তত পেশাদার ফুটবলে হেড নিষিদ্ধ করা উচিত। এটা বিপজ্জনক।
তিনি বলেন, আঠারো বছরের নিচে কারও হেড করা উচিত নয়। অনূর্ধ্ব-১২ কিংবা অনূর্ধ্ব-১৪ বছর বয়সীদের জন্য এমন ফুটবল খেলা উচিত যা শারীরিকভাবে কম সংঘাতপূর্ণ। এটা আমাদেরই তৈরি করতে হবে। ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা ফুটবল খেলতে পারে তবে হেড করা যাবে না।
উল্লেখ্য, ইংল্যান্ড ও ওয়েস্টহ্যাম ইউনাইটেডের সাবেক ফুটবলার জেফ অ্যাস্টলের মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটিত হওয়ার পর হেড নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে ইউরোপিয়ান ফুটবলে। টানা ১০ বছর আলঝেইমার রোগে ভোগার পর ২০০২ সালে ৫৯ বছর বয়সে মারা যান অ্যাষ্টল। পরে তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, মস্তিষ্কে ক্রমাগত আঘাতের (সিটিই) জন্যই আসলে মারা গেছেন অ্যাস্টল। যার পেছনে দায়ী মূলত চামড়ার ভারী ফুটবল। তা ছাড়া মস্তিষ্কে ক্রমাগত আঘাত আলঝেইমার রোগের জন্যও দায়ী। মুষ্টিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে এমন রোগে ভোগার প্রবণতা বেশি।