শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

Close

Homeশিক্ষাঙ্গনশিক্ষার্থীর ভাবনা : বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী; প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির পঞ্চাশ বছর

শিক্ষার্থীর ভাবনা : বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী; প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির পঞ্চাশ বছর

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বহু ত্যাগ তিতিক্ষার মাধ্যমে স্বাধীনতার লাল সূর্য আমাদের হলো। ৫০ বছর অতিক্রম করে আজ সূবর্ণ জয়ন্তীর সাক্ষী হলাম আমরা। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির খাতায় যোগ হয়েছে নানান কিছু। দেশের নানান প্রান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন পূর্ণতা-অপূর্ণতার গল্প। তুলে ধরেছেন যোবায়ের আহমদ

 

“গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং মানবিক মর্যাদার যথার্থ ব্যবহার হোক”

৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের অর্ধ শতাব্দী পেরোল। ছোপ ছোপ রক্তের দাগ পেরিয়ে একটি নতুন সূর্য পেয়েছি। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সীমানায় আমাদের অর্জন একেবারে মন্দ নয়। সময়ের পরিক্রমায় আজ বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের একটি উজ্জ্বল অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতির চাকা এগিয়েছে অনেক দূর। করোনায় বিধ্বস্ত অর্থনীতির মধ্যেও জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৬.৪%। মাথাপিছু আয় ছাড়িয়েছে দু হাজার ডলার। মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার, পদ্মাসেতু সহ দশটি মেগা প্রকল্পের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। শিল্প-কারখানার পাশাপাশি তথ্য ও প্রযুক্তি খাতেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বিজয়ের ৫০ বছরে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির স্থলে দাঁড়িয়ে চাই শুধু শক্তিশালী গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শিক্ষা ও চিকিৎসার যথাযথ ব্যবহার। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মধ্য দিয়ে বড় হোক আগামীর প্রজন্ম।

মাহমুদুল ফাহিম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

“নতুন দিগন্ত উম্মোচনের দায়িত্ব নিতে হবে”

স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরের অর্জনের তালিকায় বাংলাদেশ নানা চরাই-উৎরাই পেরিয়ে বিশ্বকাতারে নিজের অদম্য অগ্রগতির জানান দিয়ে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে পদার্পণ করলেও অনেক প্রাপ্তির আড়ালে রয়ে গেছে অপ্রাপ্তির বেদনা। এই অপ্রাপ্তির কারণগুলোর একাংশে রয়েছে শারীরিক সক্ষমতার দোহাই দিয়ে এক শ্রেণীর মানুষের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা পুরুষের পাশাপাশি নারীকে সমান মর্যাদা প্রদানে অনীহা। আর তাই এই অনীহার পাঠ চুকাতে বিজয়ের ৫০ বছরে তরুণ প্রজন্মকে নারীর অসামান্য অবদানকে পুরুষের সমান মর্যাদা প্রদান নিশ্চিতে আগামী প্রজন্মের কাছে ‘বীরাঙ্গনা’দের অদম্য ও সাহসী ভূমিকার কথা পৌঁছে দিয়ে স্বাধীনতার প্রাপ্তির খাতায় নতুন দিগন্ত, নতুন বিজয় উম্মোচনের দায়িত্ব নিতে হবে।

সুরাইয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

“প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির মিশেলেই আমাদের পথচলা”

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। ‘৭২—এ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিলো ৫৮০ ডলার যা বর্তমানে ২৫৫৪ ডলারে উন্নীত হয়েছে।  ৭২-এ আমাদের শিক্ষার হার ছিলো ১৬.৮ শতাংশ যা বর্তমানে প্রায় ৭৪ শতাংশ। বাংলাদেশের ৯৯.৯৯ শতাংশ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। ২০১৪ সালে আমরা সমুদ্র বিজয় করি। অনেকাংশে নিশ্চিত হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন, দূরীভূত হয়েছে লিঙ্গবৈষম্য। আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ পেরিয়ে এসেছি বহুদূর পথ।বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে এখন বিশ্ব উন্নয়নের রোল মডেল। প্রাপ্তির জায়গাটা যদিও ঝলমলে তবুও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শিক চেতনাকে আমরা জাতীয় জীবনে ধারণ করতে পারিনি। ৮০’র দশকটা কেটেছে সংকটের ভেতর দিয়ে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করেতে পারিনি। জাতির পিতার খুনিদের বিচার নিশ্চিত হয়নি। অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যার কারণে শিক্ষার হার বাড়লেও গুণগত মান নিশ্চিত হয়নি।

হাসান মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

“গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার অবাধ চর্চার প্রত্যাশা কামনা”

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বাঙালি জাতি পরাধীনতা ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে পৃথিবীর বুকে স্বাধীন, সার্বভৌম ভূখণ্ড হিসেবে আবির্ভাবের আজ পঞ্চাশ বছর। এই স্বাধীনতা কৌশলগত কারণে দখলকারীদের উপনিবেশ ছেড়ে যাওয়ার ফলে প্রাপ্ত স্বাধীনতা নয় ; বরং অজস্র প্রাণের বিনিময়ে সশস্ত্র সংগ্রামে শত্রুকে পরাস্ত করে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতা। মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকা থেকে হেনরি কিসিঞ্জারের তথাকথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’—র অর্থনীতি এখন ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বিদ্যুতায়ন, গ্রামীণ সড়কের ব্যবস্থা, শিল্পায়ন, গৃহায়ণ, নগরায়ণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, দারিদ্র্য বিমোচন প্রভৃতি ক্ষেত্রে । দ্রারিদ্র্য সূচক এখন ১৭’র ঘরে। সমূদ্রসীমা জয়, নিজস্ব স্যাটেলাইট উড্ডয়ন, অর্থায়নে পদ্মাসেতু পদ্মাসেতু সহ দশটি মেগা প্রজেক্ট নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এখনো অব্যাহত।

উচ্চ শিক্ষার জন্য বাংলা ভাষায় প্রণীত বইয়ের অপ্রতুলতা, অনুবাদে সীমাবদ্ধতা, দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মাতৃভাষা বাংলার প্রচলন আজও সীমাবদ্ধ। নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ,শিশু নির্যাতন ক্রমবর্ধমান। একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে উচ্চাসনে বসিয়ে দেশটিকে ধর্মান্ধতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সুবর্ণজয়ন্তীতে পূর্ণ গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা চর্চার ক্ষেত্র আরো বর্ধিতকরণ প্রত্যাশা।

মারদিয়া তন্বী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

“অর্জনের খেরোখাতা; তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে বিশ্ব রোল মডেল”

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারা দেশের আবালবৃদ্ধবনিতা আনন্দে-উল্লাসে ফেটে পড়ে, অভ্যুদয় ঘটে বিশ্বের বুকে বাঙালির একটি স্বাধীন রাষ্ট। প্রশাসন অসংগঠিত ও অনুপস্থিত। বৈদেশিক মুদ্রার শূন্য ভান্ডার ও ভারসাম্যহীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। আহমেদ ছফার ভাষায়, ‘রক্তভেজা অন্ধকারে থমকে দাঁড়ায় রাত আদ্দিকালের ইতিহাস বাড়ায় লোহার হাত। নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন কোটি শরণার্থীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসন চ্যালেঞ্জ। বিশ্বমন্দা ও নানা আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বন্যা, খাদ্যাভাব, সামাজিক অস্থিরতা ও আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছিল।

৫০ বছরে আমাদের অর্জন খুব একটা কম নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত, তলাবিহীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ নামের এই দেশটি আজ বিশ্বের দরবারে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে আছে। অর্থনৈতিকভাবে বা অবকাঠামোগতভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের এক রোল মডেল আজ সারা বিশ্বে। বেড়েছে শিক্ষার হার, বেড়েছে কর্মসংস্থান, রপ্তানি বাণিজ্য। প্রভূত উন্নতি হয়েছে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাতে।

তৈয়বুর সিফাত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ডেল্টামেইল/জেএ

আপনার মন্তব্য দিন

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

- Advertisment -
  • সর্বশেষ
  • আলোচিত

সাম্প্রতিক মন্তব্য

স্বঘোষিত মহাপুরুষ on লকডাউন বাড়লো আরও একসপ্তাহ
জান্নাতুল ফেরদৌস on চিরবিদায় কিংবদন্তি কবরীর